কালচার
আজকে সকালেই ভাবলাম কালচার নিয়ে লিখব ! ঘর থেকে বেরুনোর আগে তাই ডিকশনারি দেখে নিলাম শব্দটার অর্থ কি ! কারণ ইন্টারনেট এর যুগে ভুল হলে আর রক্ষা নেই গুগলের ইঞ্জিনে সার্চ দিয়ে আমাকে তুলোধুনা করে ছাড়বে সবাই ! যাই হোক বাংলা একাডেমি আমাকে হতাশ করেনি তারা একটি জাতির ভাষা থেকে শুরু করে শিক্ষা সংস্কৃতি শিল্প সাহিত্য জীবন যাপনের তাবত অন্তর্ভুক্তি দেখাতে ভুল করেনি ! এমনকি বাকতেরিয়াকে রোগ নির্ণয়ের জন্য যে আবাদ করা হয় তার নাম যে কালচার তা বলতেও বাদ রাখেনি ! তবে ধর্ম যে কালচারের অংশ নয় তা বেশ বুঝতে পেরেছি কারণ ওরাও তার উল্লেখ করেনি ! তবু অনেকে মাঝে মাঝে কালচারের সাথে মিলিয়ে ফেলে ! তাই বাঙালির কালচার যে বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের সহাবস্থানের অনন্য ঐতিহ্য তা ভুলে যায় করে ফেলে আমাদের কালচার বিরোধী কর্মকান্ড বাধিয়ে ফেলে লংকাকান্ড ! তখন আমাদের মত নিরীহ মানুষগুলো পেতে থাকে সীমাহীন কষ্ট যা কিনা আমদের কাল্চারেরী অংশ !
যত দূর দেখেছি বাঙালিরা খুব অল্পতেই কষ্ট পেয়ে যায় যা অন্যজাতির মানুষের মধ্যে খুব একটা দেখা যায়না ! আবেগ প্রবণতা আমাদের সহজাত আর বোধহয় অতিথি পরায়ন ! আমাদের প্রবাদেও আমরা লক্ষ করি তারই প্রতিধ্বনি "অতিথি নারায়ণ " ! আর এই কালচারে চর্চায় আমরা আজ মহা সংকটের দ্বার প্রান্তে ! বিভিন্ন জাতি গোষ্টির আতিথেয়তা করতে গিয়ে আমরা বাঙালিরা হয়ে পরেছি সংকর উদ্ভট একজাতি ! আমাদের আর এক জাত বৈসিস্টের মধ্যে পরে হয়ত আমরা বিভিন্ন জাতের মানুষের খারাপ অভ্যাস গুলো খুব দ্রুত আয়ত্ত করেফেলি তাই আমরা বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের সংস্পর্শে এসে সেইসব ধর্মের পোশাকি দিকগুলো যত দ্রুত গ্রহণ করেছি ঠিক তার উল্টোটা মানে ধর্মের মূল মানবিক দিকগুলোর বৈশিষ্ট নীতি সমূহ আত্মস্থ করতে পেরেছি সামান্যই ! শিক্ষা সংস্কৃতি অনেকটা টাকার মত তরল এর প্রবাহ যাকে ইচ্ছে করলেই কেউ আটকিয়ে রাখতে পারেনা আর তাই শুধু আমরা নয় পৃথিবীর তাবত জাতি গোষ্টি একে অপরের কৃষ্টি কালচার আদানপ্রদানের মাধ্যমে ভাষার মতই হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধশালী ! আর এর প্রক্রিয়াটি সদাই ক্রিয়াশীল অনেকটা বহমান নদীর মত তা সবসময় যে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে তা কিন্তু নয় বরং অনেকসময় শুধুমাত্র প্রচার যন্ত্রের সুকৌশলের ব্যবহার কোনো প্রতিষ্ঠিত সমৃদ্ধশালী কালচার বানের পানিতে ভেসে যেতে পারে এমনকি সেই সংস্কৃতির আগ্রাসী চরিত্র আমূল পাল্টেই খান্ত হয়না তাকে নিয়ে রীতিমত বানিজ্য শুরু করে দেয় ! কালচার পরিনত হয় পন্যে যেন কোনো প্রযুক্তি পাতেন্ট করে বাজারে ছেড়ে মুনাফা অর্জনই তার লক্ষ !
পাঠক হয়ত আমাকে ইতিমধ্যে রক্ষনশীল কোনো ভাবনাচিন্তার প্রচারক মনে করে থাকবেন যে কিনা অন্ধকুপে আবদ্ধ থাকার চিন্তায় মগ্ন ! প্রকৃত পক্ষে আমার উদ্দেশ্য মোটেই তা নয় বরং নিজস্ব সংস্কৃতর চর্চার মাধ্যমে শানিত করা পাশাপাশি অপরের সংস্কৃতির উন্নত প্রগতিশীল দিকগুলো নিজস্বতা বজায় রেখে গ্রহণ কিবা বর্জন করা যেতেই পারে ! তবে তা হতেই হবে আমাদের কালচারের মূলসুর অক্ষুন্ন রেখেই ! কেননা আমরা বহন করছি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য মন্ডিত বিচিত্র সংস্কৃতির মিলনের সুমহান আদর্শ ! যা কিনা ধারণ করে আছে সুপ্রাচীন আর্য অনার্য মঙ্গলীয় আরব এমনকি প্রাচ্চের তথাকথিত উদার সংস্কৃতির ধারও আমরা গ্রহণ করেছি খুব সহজ ভাবেই ! প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতি গোষ্টি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির লালন করতে পারছে মূলত বাঙালি সংস্কৃতির আগ্রাসী চরিত্র কোনদিন তেমন ছিলনা বলেই !
অনেকে বলে থাকে ধর্ম আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এসে আমাদের ঐতিহ্য মন্ডিত শান্তিপূর্ণ কালচারের ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছে আমি ওই মতের সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারিনি কারণ ধর্ম ইউরোপেও অনুপ্রবেশ করেছে তাই বলে গ্রিক ইতালীয় কিবা ফরাসীরা তাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য কি ঐশ্বর্য কোনটাই হারিয়ে ফেলেনি বরং ধর্ম তাদের সংস্কৃতি গুলোকে অধিক নীতি ও ঔদার্য অনুশীলনের পথ করে দিয়েছে !
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের কথাও যদি ধরি আদিকাল থেকেই কিন্তু বহু ভাষার বহুধর্মের লিলাভুমিই ছিল এমনকি মুঘলদের সাম্রাজ্যবাদী অনুপ্রবেশ সত্তেউ বাংলা বিহার উরিশ্সা তামিল সিংহলি কিবা পাঞ্জাবি সিন্ধি এমনকি কাশ্মিরীরাও তাদের নিজস্বতা বজায় রেখেই সামর্থ অনুযাই অগ্রসর হয়েছে ! অথচ সবচেয়ে সম্ভ্হাবনাময় জাতি তার অগ্রসর চিন্তা সমৃদ্ধ কালচার্ড জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্পী সাহিত্যিক সমৃদ্ধ মনীষী জন্মদিয়েও ইংরাজদের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে জাতীয় অগ্রগতির বাধাসমূহ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়নি ! আজও ধর্মের বলি হয়ে মধ্যযুগীয় চিন্তার চক্রে আবর্তিত হতছে যা আধুনিক তো নয়ই বরং পশ্চাত মুখী যাত্রার পথেই ধাবিত হবার ইঙ্গিত বহন করে যা আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন কোনো বাঙালি কিবা বাংলাদেশীর কাম্য হউয়া উচিত নয় !

ডাক্তার জাহিদ রায়পুরা ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০১২ খ্রি :

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

poet

Early pregncy

poltitubeinternational